নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া
যে বিক্রিয়ায় কোনো মৌলের নিউক্লিয়াসের পরিবর্তন ঘটে তাকে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া বলে। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরমাণুর বা আয়নের সর্ববহিস্থ শক্তিস্তর থেকে ইলেকট্রনের আদান-প্রদান ঘটে। কিন্তু নিউক্লিয়াসের কোনো পরিবর্তন হয় না। কিন্তু নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় পরমাণুর নিউক্লিয়াসের পরিবর্তন ঘটে। এখানে ইলেকট্রনের কোনো ভূমিকা নেই। এ বিক্রিয়ার ফলে নতুন মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়। যে বিক্রিয়ার ফলে ছোট ছোট মৌলের নিউক্লিয়াস একত্র হয়ে বড় মৌলের নিউক্লিয়াস অথবা কোনো বড় মৌলের নিউক্লিয়াস ভেঙে একাধিক ছোট মৌলের নিউক্লিয়াস তৈরি হয় সেই বিক্রিয়াকে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া বলে। নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে শক্তি উৎপন্ন হয়।
বিভিন্ন রকমের নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া আছে; তবে এদের মধ্যে নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়া ও নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া অন্যতম ।
নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়া
যে নিউক্লিয়ার প্রক্রিয়ায় কোনো বড় এবং ভারী মৌলের নিউক্লিয়াস ভেঙে ছোট ছোট মৌলের নিউক্লিয়াসে পরিণত হয় তাকে নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়া বলে। এর সাথে নিউট্রন আর প্রচুর (Fission) পরিমাপে শক্তি উৎপন্ন হয়।
নিউক্লিয়ার চেইন বিক্রিয়া
নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়াগুলোই মূলত নিউক্লিয়ার চেইন বিক্রিয়া (Chain Reaction)। যে বিক্রিয়া একবার শুরু হলে তাকে চালু রাখার জন্য অতিরিক্ত কোনো শক্তির প্রয়োজন হয় না তাকে নিউক্লিয়ার চেইন বিক্রিয়া বলে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন
বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারমাণবিক চুল্লি ব্যবহার করা হয়। নিউক্লিয় ফিশন বিক্রিয়ার সমর যে চেইন বিক্রিয়া হয়, সেই চেইন বিক্রিয়াকে যে যন্ত্রের সাহায্যে নিরন্ত্রণ করা হয় তাকে পারমাণবিক চুল্লি বলে। পারমাণবিক চুল্লির সাহায্যে প্রচুর শক্তি উৎপাদন করা যায়। পারমাণবিক চুল্লির ভিতরে ফিশন বিক্রিয়ার ফলে যে সকল ক্ষুদ্র মৌল তৈরি হয় সেগুলো উচ্চ গতিসম্পন্ন হয়। এই উচ্চ গতিসম্পন্ন ক্ষুদ্র মৌলগুলো চুল্লির ভিতরে একে অন্যের সাথে এবং দেয়ালে প্রচন্ড জোরে আঘাত করে ও প্রচুর তাপশক্তি উৎপন্ন করে। এই তাপ চুল্লি থেকে বের করে নিয়ে এসে সেই তাপ বাষ্প উৎপাদন প্রকোষ্ঠে চালনা করা হয়। এই তাপ দিয়ে বাষ্প উৎপাদন করা হয়। এখন ঐ বাষ্পের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য টারবাইন চালনা করা হয়। ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পারমাণবিক চুল্লির ভেতরেই বাল উৎপাদনের ব্যবস্থা থাকে। পৃথিবীর অনেক দেশে পারমাণবিক চুল্লির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার পাবনা জেলার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাবে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।